![]() |
শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী |
যায় যায় দিন (০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০)
বাংলাদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে এমন একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করতে চলেছে, যার ফলে প্রায় দু’হাজার বাংলাদেশি সৈন্য ইয়েমেন সীমান্তে মোতায়েন করা হবে। বাংলাদেশের জন্য এ সামরিক চুক্তির গুরুত্ব কতটা? এর প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে একটু পেছন দিকে তাকাতে হবে।
কয়েক বছর আগে সৌদি আরব কয়েকটি ইসলামী দেশকে নিয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী একটি সামরিক কোয়ালিশন’ গঠন করেছিল এবং সেখানে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
কিন্তু এই কোয়ালিশন কতটা কাজ করছে, বাংলাদেশ সেখানে যোগ দিয়েছে কিনা এবং দিলেও কোন ধরনের ভূমিকা রাখছে বা রাখবেÑ তা নিয়ে এখন পযর্ন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। এরপর গত অক্টোবরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ সৌদি আরবের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়। কিন্তু সেই চুক্তির আওতাও স্পষ্ট করা হয়নি।
তবে এখন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে বিষয়টি খোলাসা করে বলতে শোনা গেল। আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি রিয়াদে এই চুক্তিটি সই হবে বলে জানিয়েছেন সৌদি আরব সফররত বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। চুক্তিটির আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়নের প্রায় ১,৮০০ সৈন্য সৌদি আরবে মোতায়েন করা হবে।
এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, এবার বেশ প্রকাশ্যেই এই প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা বলা হলো এবং এর একটা আনুষ্ঠানিক রূপও দেয়া হচ্ছে।
তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেশ বড় একটা সেনাদল এর আগেও সৌদি আরবে ছিল।
কুয়েতকে ইরাকের দখল থেকে মুক্ত করার জন্য ১৯৯১ সালে যখন মাকির্ন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সৌদি আরব থেকে ইরাকে অভিযান চালায়, তখন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীরও সেখানে উপস্থিতি ছিল। তবে তাদের ভ‚মিকা ছিল সৌদি সামরিক এলাকাগুলো ইরাকি হামলার হাত থেকে রক্ষা করা।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. আলী বলেন, তার মতে বাংলাদেশ হয়তো আগ্রাসী কোন ভ‚মিকা পালন করতে চাইবে না, কিন্তু প্রতিরক্ষামূলক ভ‚মিকা অবশ্যই পালন করতে আগ্রহী হবে।
তবে তিনি বলছেন, ইয়েমেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সেনাদের জন্য এর গুরুত্ব মোটেও কম নয়।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো সশস্ত্র বাহিনীর মূল দায়িত্ব হলো যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনী স্বাধীনতার পর তেমন কোনো যুদ্ধের অভিজ্ঞতা পায়নি। এক দিক থেকে এটা সুসংবাদ যে তাদের যুদ্ধ করতে হয়নি, তবে যে কোন পেশাদারি বাহিনীকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়।’
![]() |
শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী |
‘শান্তিকালীন প্রস্তুতি যতটাই ভালো হোক না কেনÑ তার সাথে সত্যিকার বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কোন তুলনা হয় না।’
‘সে কারণেই প্রকৃত যুদ্ধ বা রণাঙ্গনের আশেপাশে থেকেও যদি একটা ‘অপারেশনাল’ বা ‘প্রায়-যুদ্ধ পরিস্থিতি’র অভিজ্ঞতা হয় - সেটাও সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূণর্।
ড. সৈয়দ মাহমুদ আলীর মতে সৌদি আরব যেহেতু মুসলিম বিশ্বের একটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র, তাই বাংলাদেশের সঙ্গে এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দু’দেশের সম্পকর্ ঘনিষ্ঠতর হবে। শুধু কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই যে বাংলাদেশ সৌদি আরবের সমথর্ন আশা করতে পারে তাই নয়, জ্বালানি-আমদানিকারক একটি দেশ হিসেবেও ভবিষ্যতে সৌদি আরবের দিক থেকে সহানুভ‚তিশীল আচরণ আশা করতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে। এ পযর্ন্ত রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলেছে। কিন্তু সৌদি আরবের ব্যাপারে সাম্প্রতিক কালে মধ্যপ্রাচ্যে একটা মেরুকরণ হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মেরুতে অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব, কাতার, ইরান বা তুরস্কের মতো দেশগুলো।
ফলে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে এতদিন যে ভারসাম্য রেখে চলছিল - সৌদি আরবের সাথে সামরিক চুক্তিতে সেই ভারসাম্য কি নষ্ট হতে পারে?
এ প্রশ্ন করলে সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ‘ব্যালান্সের কথা যদি আমরা বলি তাহলে ইতিবাচক-নেতিবাচক সব দিক বিচার করে দেখতে হয়, কি করলে দেশের লাভ হবে এবং ক্ষতি সবচেয়ে কম হবে।’
‘এটা অনেকটা নিভর্র করবে বাংলাদেশি সৈন্যরা কি ভ‚মিকা পালন করে এবং তারা ইয়েমেনে বা অন্য কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে কিনা তার ওপর।’
‘তবে এ মুহূতের্ বাংলাদেশি সৈন্যরা যদি শুধু সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক কাজে নিযুক্ত হনÑ তাহলে এর একটা সুফল হতেও পারে।’
কিন্তু এর ফলে কি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বাংলাদেশ সৌদি আরবের সাথেই আছে’Ñ এমন একটা ছাপ বাংলাদেশের গায়ে একটা ছাপ লেগে যাবে না?
এ প্রশ্নের জবাবে ড. আলী বলেন, এটা প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই হয়।
‘তবে মধ্যপ্রাচ্যে কাতার ছাড়া সুন্নিপ্রধান দেশগুলো এক দিকে, আর ইরান এবং সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় এমন দেশগুলো আরেক দিকে। তুরস্ক সম্প্রতি একটা মধ্যবতীর্ অবস্থান নিয়েছে, তবে তার কারণ অন্য।’
‘বাংলাদেশ হয়তো একটা হিসাব-নিকাশ করেছে যে এর ফলে কি সুযোগসুবিধা পাওয়া যাবে, এবং নেতিবাচক দিকগুলোই বা কি হবে। হয়তো ইতিবাচক দিকগুলোই বেশি বলে তারা মনে করেছে।’ কিন্তু বাংলাদেশ যদি সত্যিকার যুদ্ধ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে - তাহলে অবশ্যই পরিস্থিতির একটা পরিবতর্ন হবেÑ বলেন সৈয়দ মাহমুদ আলী। বিবিসি বাংলা
No comments:
Post a Comment